পৃথিবী

নিউক্লীয়ার পাস্তা কাকে বলে?

অর্পণ সাঁতরাঃ নিউট্রন স্টার হল হিউজ ম্যগনেট যা ব্রহ্মান্ডে খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। নিউট্রন স্টার চন্দ্রশেখর লিমিট অর্থাৎ সূর্যের চেয়ে ১.৪ গুন ভর থেকে ২.৫সোলার ম্যস প্রর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের নিউট্রন স্টার তখন হয় যখন অত্যন্ত বড় নক্ষত্র (৮ থেকে ২০গুন সূর্য) এর মধ্যে সুপারনোভা হয়।

নিউট্রন স্টারকে প্রথমে ব্যাখ্যা দিয়েছিল  Ernest Rutherford ১৯২০সালে। ১২বছর পর James Chadwick প্রথম নিউট্রন স্টার খুজে পায়। নিউট্রন স্টারকে বুঝতে গেলে সবার আগে পরমানু সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। আপনারা সকলেই জানেন পরমাণুর প্রোটন ইলেকট্রন নিউট্রন দ্বারা গঠিত। কিন্তু হয়তো জানেন না যে একটি পরমাণুর বেশিরভাগ অংশই ফাঁকা জায়গা। পরমাণুর ভর এর জন্য মূলত দায়ী নিউট্রন। একটি পরমাণু যদি একটি ফুটবল খেলার মাঠের মতো বড় হয় তাহলে নিউট্রন হল সেই মাঠে থাকা একটি মটর শুটির দানার মত।

এবার আসা যাক নিউট্রন স্টারে। যখন সুপারনোভা হয় তখন মাধ্যাকর্ষণের কারনে নক্ষত্রের ভেতর সংকোচন হয়ে যায়। এই সময় ভেতরে থাকা সমস্ত ইলেকট্রন ও প্রোটন একের সাথে অপরে ফিউজ হয়ে নিউট্রন ও নিউট্রিনো তৈরি করে। নিউট্রিনো অত্যন্ত দ্রুত উবে যায়। বাকি থাকে একটি নক্ষত্রের কোর যা ১০০শতাংশ নিউট্রন দিয়ে তৈরি। এবার জন্ম হলো একটি নিউট্রন স্টারের।

নিউট্রন স্টার যা ১০০শতাংশ নিউট্রন দিয়ে তৈরি তা নিজের গ্র্যভিটির মধ্যে এতোটাই ভেঙ্গে যায় যে তার আয়তন একটি শহরের মত হয়ে যায়। মোটামুটি ১০-২৫কিলোমিটার থেকে যায়। কিন্তু ভূলেও এর চেহারা দেখে ধোকা খাবেন না। নাহলে সমস্যা প্রচুর। কারনটা বুঝুন।

পরমানু এতটা খালি জায়গা হওয়ার পর আমরা সবাই পরমানু দিয়েই তৈরি। অর্থাৎ এই খালি জায়গা আমাদের মধ্যে আছে। তারপরও আমাদের একটা ভর আছে। আর নিউট্রন স্টারের কোনো খালি জায়গা নেই। আছে শুধু মাত্র নিউট্রন। এবার ভাবুন এর ম্যস কি সাংঘাতিক রকম হতে পারে। যদি কোন জাদু বলে আপনাকে অমর করে দেওয়া হয় এবং আপনি নিউট্রন স্টারের ভুমিতে নেমে তার থেকে এক চামচ নিউট্রন স্টার আপনি পৃথিবীতে নিয়ে আসেন তাহলে তার ওজন পৃথিবীতে হবে চার থেকে ছয় বিলিয়ন টন। যদি আমরা তুলনা করি সূর্যের সাথে তাহলে এক চামচ সূর্যের ভর পৃথিবীতে হবে মাত্র ২-৩কেজি। আরেক ভাবে হিসাব ধরলে একটি সুগার কিউবের সমান নিউট্রন স্টারের ওজন মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে বেশি।

যদিও সেটা সম্ভব না কারন নিউট্রন স্টার এক চামচ তার অংশ থেকে আলাদা করার পরই গ্র্যভিটির ইনফ্লুয়েন্স শেষ হবে। আর স্পেসের মধ্যে নিউট্রন স্টারের নিউট্রনের দলা যা আপনি আপনার একটি চামচে আনছিলেন যা প্রোটন আর ইলেকট্রনে ভেঙ্গে যাবে আর উবে যাওয়ার আগে যা এনার্জি উৎপন্ন হবে তা আমাদের সূর্য ২-৩সেকেন্ডে উৎপন্ন করে।

এছাড়া নিউট্রন স্টার অত্যন্ত গরম হয়। এর গায়ের তাপমাত্রা ৬লক্ষ ডিগ্রী কেলভিন হতে পারে। আপনি কাছে গেলেই বাষ্পিভুত হয় যাবেন।

নিউট্রন স্টার একটি দৈত্যাকার ম্যগনেট। এর ম্যগনেটিক ফিল্ড বিভৎস রকম শক্তিশালী। টেসলা হল ম্যগেনটিক ফিল্ড মাপার ইউনিট। যদি আমরা পৃথিবীর ম্যগনেটিক ফিল্ডকে দেখি তাহলে তার পরিমাপ হবে 0.0000305 tesla! যেখানে একটা নিউট্রন স্টারের ম্যগনেটিক ফিল্ড 10^11 tesla।

যদি আপনি নিউট্রন স্টার থেকে কয়েক হাজার কিমি দূরেও থাকেন তবুও এটি আপনার শরীরকে ধুলোর মত অনু পরমাণুকে ভেঙ্গে আপনার শরীর থেকে আলাদা করে দেবে। এতটাই ভয়ানক নিউট্রন স্টার। নিউট্রন স্টার এতটাই ম্যসিভ যে এটা স্পেশ টাইম ফেব্রিককে ব্ল্যক হোলের মত ছিদ্র না করলেও এটিকে বাজে ভাবে ব্যন্ড করে দেয়। তাই আলোর গতীপথকে প্রভাবিত করে তাকে বেকিয়ে দিয়ে গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং তৈরি করে। (সেটা আপনাদেরকে আবার আলাদাভাবে জানান হবে)

একটি নিউট্রন স্টার অক্ষে অত্যন্ত দ্রুত প্রদক্ষিণ করে। প্রতি সেকেন্ডে একটি নিউট্রন স্টার ৭১৬বার নিজের চারি দিকে প্রদক্ষিণ করতে পারে।কারন? একটি ইটের ছোট ভারি খন্ড নিন। তাকে দড়ি দিয়ে বাধুন। এবার দড়ির অপর প্রান্ত শক্ত করে ধরে ইটকে ঘোরাতে শুরু করুন। ইটকে সার্ফেস থেকে তুলে একটি স্থিতিশীল কক্ষপথে ঘোরাতে খুব কম গতি আপনার লাগবে। নয়তো ইট মাটির দিকে পরে যাবে। এখন আপনি ভর বেগ দিয়ে মাধ্যাকর্ষণ বাতিল করছেন। তাই মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব ইটে পরছে না। এবার আপনি যতটা দূরে ইটকে ঘোরাচ্ছিলেন এবার সেই দূরত্বকে অর্ধেকে নিয়ে আসুন। এবার আপনার সবচেয়ে কম গতীকে অনেক বাড়াতে হবে আর তা না হলে ইটে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব পরবে আর নিজের কক্ষপথে স্থায়ী থাকতে না পেরে নিচের দিকে চলে যাবে। নিউট্রন স্টারের ক্ষেত্রে এটাই হয়। যেহুতু গ্র্যভিটি একে অত্যন্ত ছোট করে দেয় তাই এটি নিজেকে স্থায়ী রাখতে প্রচন্ড দ্রুত ঘুরতে শুরু করে।

কোনো কোনো নিউট্রন ষ্টার নিজের অক্ষের ওপর এত দ্রুত ঘুরতে শুরু করে তখন তার দুই মেরু থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পাল্স রেডিয়েশান ও গামা রে বিম করতে থাকে। দূর থেকে একে মনে হয় কোনো লাইট হাউস যা আলো অন অফ করছে। এই ঘূর্ণন অত্যন্ত স্থায়ী। অর্থাৎ এই আলো জ্বলা ও নেভার মধ্যে সময়ের দূরত্ব একদম সঠিক। এত সঠিক কোনো কিছু ব্রহ্মান্ডে নেই। এই “blinking neutron star” কে বলা হয় “Pulsar”।

একটি নিউট্রন স্টারে আরেকটি জিনিস থাকে। আর তা এর কোরে। প্রচন্ড চাপ ও তাপে এর নিউট্রন একে অপরের সাথে মিলে একটি উপাদান তৈরি করে যাকে বলা হয় নিউক্লীয়ার পাস্তা। এটা বর্তমানে ব্রহ্মান্ডে সব থেকে শক্তিশালী উপাদান। যেহুতু ১০০শতাংশ নিউট্রন দিয়ে তৈরি তাই এটা “Virtually Unbreakable”

RX J185635-3754 আমাদের সব থেকে কাছের নন পাল্সিং নিউট্রন স্টার। যার দূরত্ব পৃথিবী থেকে মাত্র ২০০আলোকবর্ষ। আর J0108-1431 হল আমাদের সব থেকে কাছের পাল্সার যার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪০০আলোকবর্ষ।আরেক ধরনের নিউট্রন স্টারকে বলা হয় ম্যগ্নেটার। পুরো ব্রহ্মান্ডের সব থেকে ভয়ানক ম্যগনেট। একটি সাধারণ নিউট্রন স্টারের ম্যগনেটিক ফিল্ডের থেকে একটি ম্যগ্নেটারের ম্যগনেটিক ফিল্ড ১০০০গুন শক্তিশালী হতে পারে। এখনও প্রর্যন্ত মাত্র ৩০টি ম্যগ্নেটার খুজে পাওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.