ইন্দিরা গান্ধির সত্তর বছর আগের যে সিদ্ধান্তে গোটা ভারতবর্ষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল
নিউজ ডেস্কঃ ১৯৭১ সালটি ভারতের জন্য ছিলো খুবই গুরত্বপূর্ণ এক বছর। রাজনীতি, ক্রিকেট, যুদ্ধ থেকে শুরু করে সব দিকেই ভারতের সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল এই বছর। এই বছরেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মাথানত করে ভারতীয় সেনা এবং মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সামনে। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ভারত তখনও ছিলো জর্জরিত তবে, ছোট- বড় এই জয়গুলি বছরটিকে ভারতবাসীর কাছে পরিণত করেছিলো এক উল্লাসের বছরে।
সত্তর বছর পরে, এখনো একফোঁটাও গুরুত্ব কমেনি ১৯৭১ সালের।
১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভারতের সমস্ত জাতীয় সংবাদপত্র ভরে গেছিল কেবলমাত্র একটি শিরোনামেই – “বাংলাদেশ স্বাধীন”। আর তার নিচেই খবরের প্রথম পাতায় ছিল আরেকটি খবর– “45 প্যাটন নক আউট”, “ইয়াহিয়া- আমরা লড়াই করব” এবং “সংসদে উল্লাস।”
এর মধ্যে একটা খবরও সেই সময় ভারতীয়দের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। প্যাটনস বলতে বোঝানো হতো যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের দ্বারা ব্যবহৃত আমেরিকান ট্যাঙ্ক। বলা হতো,ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে থাকা ট্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী এগুলো। অথচ তথাকথিত এত শক্তিশালী সামরিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও দুটি ফ্রন্টে জঘন্য ভাবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কাছে হারে যায় পাকিস্তানি সেনা। আর ইয়াহিয়া বলতে অবশ্যই বোঝানো হয়েছিলো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জেতার ব্যাপারে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তবে কপালের ফেরে যুদ্ধে হেরে দাপুটে এই সেনা জেনারেলকে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়।
যুদ্ধে ভারতের জয়ের পর সংসদে সদস্যদের উল্লাস প্রতিধ্বনিত হয়েছিল ভারতের প্রতিটি রাস্তায়। তার যথেষ্ট কারণও ছিল। ১৪ দিন ব্যাপী যুদ্ধের শেষে নব্য প্রতিষ্ঠিত দেশ ভারত তার পশ্চিমী প্রতিবেশীর অহংকার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। সক্ষম হয়েছিল পূর্বের প্রতিবেশীকে উপহার দিতে এক নতুন রাষ্ট্র। একটি স্মরণীয় বছরের এর থেকে বেশি নিখোঁজ সমাপ্তি আর হতে পারে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের এই জয় এসেছিল ঠিক এমন এক সময়ে যেখানে দরিদ্র এই দেশ চরম এক হতাশার অধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো। ভগ্নপ্রায় অর্থনীতি দাঁড় করাতে নিত্যদিন এক সংগ্রামের যুঝতে হচ্ছিল দেশবাসীকে। ফলত, এই জয় সকল ভারতীয়র মুখে এক হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল – স্থানীয় সমস্যাগুলি তো রয়েই গেছিলো, কিন্তু দেশবাসী সেই সঙ্গে উদযাপন করার মতোও অনেক কারণ পেয়েছিলো।
স্বাধীনতার পরবর্তী কালে ভারতের ইতিহাসে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী বছর। যেমন, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালে যখন প্রথম নির্বাচন সংঘঠিত হয়েছিল, ১৯৬২ সালে ভারত যখন চীনের কাছে রণক্ষেত্রে হার স্বীকার করেছিল, ১৯৭৫ সালে যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল,১৯৮৪ সালে যখন ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল, ১৯৯১ সালে যখন অর্থনৈতিক সংস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, এর মধ্যে একটাও ১৯৭১ সালের ধারে কাছে যায়না। ১৯৭১ সালের গুরুত্ব এতো বেশি কেনো সেটা জানতে গেলে বুঝতে হবে খেলা, রাজনীতি সব দিকেই দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকার পর এই বছর প্রথমবার এমন কিছু বড় ঘটনা ঘটে যা পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে ভারতকে সব দিক দিয়েই অনেকটা পাল্টে ফেলে। হকি বাদে, এতদিন যে দেশ কোনো খেলায় জয়লাভ করতে পারেনি সেখানে – ১৯৭১ সালে, স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী থেকে ঠিক এক বছর আগে ভারত প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ক্রিকেটে জয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। আর এই জয়ই ভারতের অভিজাত শ্রেণী ছাড়িয়ে অপামার জনগণের মনে ক্রিকেট প্রেমের সূচনা করে।
ওই বছরের শুরুতে যখন মার্চে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়, তখন মনে করা হয়েছিল অন্যান্য বারের মতোই পুরো লড়াই হবে ইন্দিরা গান্ধী এবং বাকি বিরোধী দলের মধ্যে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরা গান্ধীর নীতি দেখে কংগ্রেস সভাপতি এস. নিজালাঙ্গপ্পা, দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন নেতা কামরাজ, এস.কে. পাতিল, অতুল্য ঘোষ এবং মোরারজি দেশাই এতটাই হতবাক হয়েছিলেন যে রীতিমত একঘরে হয়ে পড়েন তিনি। তার নিজের দলই হয়ে যায় তার বিপক্ষে। ইন্দিরা গান্ধীর প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলিকে জাতীয়করণ করা সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে পুরো ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। এমনকি প্রাইভি পার্সগুলি অব্দি তিনি বাতিল করে দেন, যা ১৯৪৭ সালে ভারতে যোগদানকারী ভারতের পূর্ব রাজা মহারাজাদের দেওয়া হতো। সমাজতন্ত্রী বলে আক্রমণ করা হতে থাকে তাকে। পুরানো কংগ্রেস, জনসঙ্ঘ এবং স্বতন্ত্র পার্টি থেকে শুরু করে ছোট বড় সব বিরোধী দল একত্রে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে জোট বাঁধে সেই সময়।
ইন্দিরা গান্ধী, বিরোধীদের আক্রমনে খানিকটা দমে গেলেও তার সংকল্প ভাঙেনি মোটেও। তিনি উল্টে দরিদ্রদের পক্ষে আরও নতুন নীতি কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিতে আরম্ভ করেন। তার স্লোগান ছিল “গরিবি হটাও” অর্থাৎ দারিদ্রতা দূরীকরণ। তিনি মহাজোটের বিরুদ্ধে ভোটে দাড়িয়ে দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি নিজেকে সাফল্যের সাথে এমন ভাবে উপস্থাপন করেন সক্ষম হন তাতে শেষ পর্যন্ত পুনরায় কংগ্রেস ৫২০ টি আসনের মধ্যে ৩৫২ টি আসনে জিতে জয়লাভ করে। সেই সঙ্গে কেবল কংগ্রেসেরই নয় বরং ভারতীয় রাজনীতির অবিসংবাদিত নেতা হিসাবেও আবির্ভাব ঘটে ইন্দিরা গান্ধীর। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু এবং নেহরু-পরবর্তী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পেরিয়ে অবশেষে দীর্ঘ কয়েক বছর পর ভারত রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীলতা পায়।
অপরদিকে, ভারতবর্ষের এই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাদের বিস্ময়কর পারফরম্যান্স তুলে ধরে বিশ্বের সামনে। কিংস্টন জ্যামাইকায় প্রথম টেস্টে ড্র করার পর মার্চ মাসে, ভারতীয় দল শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে। এই জয়ের পেছনে দিলীপ সারদেসাই এর অবদান নেহাত কম ছিল না। এরপর বাকি তিনটি টেস্ট ও ড্র করেছিলো ভারত। পতৌদির নবাবের বদলে অধিনায়কত্বে আসা অজিত ওয়াদেকরের নেতৃত্বে ভারত এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিল।
পরবর্তী সময়ে এই একই অধিনায়কের অধিনায়ত্বে ইংল্যান্ডে আরো একটি ম্যাচে জয়লাভ করে ভারত। ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা সেই সময় এমনই পর্যায়ে পৌঁছায় যে সমগ্র ভারত জুড়ে গোটা ম্যাচ রেডিওতে টেলিকাস্ট করা হতো। রেডিও স্ট্যাটিকের কর্কশ শব্দ, কোন ভিজ্যুয়াল ছাড়াই টনি কোজিয়ার এবং জন আরলটের কণ্ঠের জাদুতে গোটা ম্যাচ যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠতো। লোকেরা পানের দোকানে, বাস স্টপে, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে বাড়িতে ট্রানজিস্টর রেডিওর চারপাশে জড়ো হয়ে শুধু খেলা শুনতো। নিছক কোনো খেলা নয় বরং ভারতবাসীর কাছে এই ম্যাচ হয়ে উঠেছিল এক জাতীয় গর্ব।
তবে, ভারতীয় ক্রিকেট দল কিন্তু পায়নি তাদের প্রাপ্য সম্মান। দেশে ফিরলে ফুল ও উপহারের বর্ষনে তাদের ঢেকে ফেলা হয় ঠিকই ,কিন্তু খুব কমই অর্থ উপার্জন করেন তারা। এতো বড় জয়ের পরেও সামান্য কিছু বেতন নিয়ে যে যার বাড়িতে ফিরতে হয় তাদের। ব্যতিক্রম ছিলেন একমাত্র ফারুক ইঞ্জিনিয়ার। ব্রিলক্রিমের সাথে চুক্তি ছিল তার।
এই আনন্দের আড়ালেও তৈরি হচ্ছিল বেশ কিছু সমস্যা। পশ্চিম পাকিস্তানী সেনার নির্মম অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে হাজার হাজার উদ্বাস্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাড়ি দিচ্ছিলো ভারতে। শরণার্থীর সংখ্যা ছুঁয়েছিল প্রায় ১০ মিলিয়নে। পূর্ব পাকিস্তানের এই মানবিক সঙ্কটকে বিশ্বের দরবারে তুলে আনার অসংখ্য চেষ্টা সত্ত্বেও সেই সময় পশ্চিমী দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি কোনো সাহায্য। উল্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানকে সাহায্য করা নিয়ে সতর্ক করে ভারতকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো রকম সামরিক কার্যক্রমে না জড়ানোর জন্য বঙ্গোপসাগরের বুকে জাহাজ পাঠিয়ে হুশিয়ারি দেওয়া হয় ভারতকে। ফলত, শুধু শরণার্থীদের স্থান ও খাদ্যের যোগান দেওয়ায় নয় সেই সঙ্গে বিশ্ব শক্তিদের বিরোধিতা করে প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তানকে সাহায্য করাও ভারতের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে,উভয় ফ্রন্টে বেশ কিছুদিন সৈন্যদের স্ট্যান্ড-বাই রাখার পর অবশেষে ৩ ডিসেম্বর বেতারে খবর আসে কোনো রকম হুশিয়ারির পরোয়া না করে ভারত সস্বস্ত্র বাহিনী নিয়ে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। ১৩ দিনের টান টান উত্তেজনাময় পরিস্থিতি পার করার পর অবশেষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের দলিল আজও জনসাধারণের স্মৃতিতে খোদাই করা রয়েছে। যুদ্ধে জয়ের সাথে সাথে সমগ্র ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা প্রবল বৃদ্ধি পায়।
তবে, এই ঘটনাগুলি কিন্তু কোনো মতেই সেই সময়ের ভারতের অন্ধকার বাস্তবকে আড়াল করে না। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ওই বছর ভারত অর্থনীতিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো পারফর্ম করলেও, বৃদ্ধির হার আটকে ছিল সেই ৩% এই। খাদ্য সংকট এমনই আকার ধারণ করেছিল যে অব্যাহত ভারতকে PL ৪৮০ প্রোগ্রামের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শস্য অব্দি আমদানি করতে হয়েছিল।
এর মাঝেই ভারতের অভ্যন্তরেই দেখা দিয়েছিল বিদ্রোহের আগুন। নকশাল আন্দোলনের আগুন পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম ও শহরের প্রত্যেক কোন থেকে আরম্ভ করে ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি মুম্বাই অব্দি। দলে দলে শিক্ষিত তরুণ তরুণীরা বিপ্লবের বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামে গ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে – জমিদার এবং অন্যদের হত্যা করা হয় এবং অপরদিকে সরকারের তরফ থেকেও ধেয়ে আসে বিদ্রোহ দমনের কড়া আদেশ। কলকাতায়, নকশালবাদ যুবকদের এমনই গ্রাস করেছিল যে বোমা তৈরি, বিস্ফোরণ এক নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনাতে পরিণত হয়। অপরদিকে বিদ্রোহ দমন করার নামে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের প্রশাসনে পুলিশ নির্মম ভাবে আরম্ভ করে হত্যালীলা। তরুনের রক্তে লাল হয়ে ওঠে রাজপথ। যুবক-যুবতীদের নির্বিচারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় জেলে।
ইন্দিরা গান্ধী নিজেও জানতেন তার বিজয়ের আনন্দ বেশিদিন টিকবে না যদি তিনি ঘরের এই সমস্যাগুলির দৃঢ ভাবে মোকাবিলা না করতে পারেন। ১৯৭৩ পুরো দমে শুরু হয় ছাত্র বিদ্রোহ। তার পরের বছরেই ১৯৭৪ সালে জর্জ ফার্নান্দেস রেলওয়ে ধর্মঘটেরল নেতৃত্ব দেন, যা স্থায়ী হয় প্রায় ২৯ দিন। মাত্র এই কয়েক দিনের ধর্মঘটই কংগ্রেস ভীত তো নাড়িয়ে ছিলোই সেই সঙ্গে বিরোধী দলের নতুন নেতা জয়প্রকাশ নারায়নের নেতৃত্বে বিরোধী দল গুলো ও পায়ের নিচের মাটি শক্ত করে ফেলতে পেরেছিল। অবস্থা এমনই হয় যে নেহেরুর পুরনো বন্ধু নারায়ণ অব্দি ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের মধ্যে তিনি কংগ্রেসে অদম্য শত্রু এবং ছাত্র ও বিরোধীদলগুলির কাছে এক গুরুত্বপূর্ন নেতা হয়ে ওঠেন। নারায়ণ ‘সম্পূর্ণ বিপ্লবের’ আহ্বান জানিয়ে সৈন্যদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান। ইন্দিরা গান্ধী মনে করতেন এটা ছিলো ভারতকে অস্থিতিশীল করে তোলার এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে, ১৯৭৫ সালে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
এর আগের বছরেই অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে, রাজনৈতিক ডামাডোলের মাঝেই লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট ম্যাচে ভারত ৪২ রান করেছিল। সেই সঙ্গে নব্য গঠিত বাংলাদেশেরও ছোট ছোট পায়ে পথ চলা শুরু হয়। তবে, ১৯৭৫ সালে মুজিব উর রহমান নিহত হলে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্ক খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়ে যায়। একাত্তরের আনন্দ ক্রমে বছরের ফাঁকে এভাবেই মিলিয়ে যায়।
কিন্তু, এতো ভয়াবহতার মধ্যেও ১৯৭১ ভারতবাসীর মনে বিশেষ এক বছর হসাবেই রয়ে গেছে। ভারতের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল এই বছর। ভবিষ্যতের নতুন আশা দিয়েছিল এই বছর ভারতবাসীকে। ১৯৭১ এর পর এই ৭০ বছরে ভারত পাল্টে গেছে অনেকটাইi- কিছু ভালো হয়েছে, কিছু মন্দ। তবে নিঃসন্দেহে এক স্মরণীয় বছর হয়ে রয়ে গেছে ১৯৭১।