পরমানু, হাইড্রোজেন বোমার থেকেও ভয়ঙ্কর বোমা পৃথিবীতেই রয়েছে
নিউজ ডেস্কঃ কোনোদিন ভেবেছেন যদি পরমানু বোমা বা হাইড্রোজেন বোমার থেকেও বিধ্বংসী কিছু হতে পারে কিনা? আসলে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে এখনও অনেক কিছু অজানা। আসতে আসতে সব সামনে আসছে।
এ্যন্টিম্যটার বোমা। নতুন শুনছেন? এই ধরনের বোমা কি কোনোদিন দেখা যেতে পারে? বা কতোটা ভয়ঙ্কর এই বোমা? কখনও ভেবে দেখেছেন? বা এই এ্যন্টিম্যটার জিনিসটা কি?
আসলে এ্যন্টিম্যটার হল ম্যটারের মতই কনা দিয়ে তৈরি। তবে এদের পরমানুর ব্যবস্থাপনা একদমই আলাদা। আসলে সাধারন পরমাণুতে মাঝখানে থাকে নিউট্রন(নো চার্জ) ও প্রোটন(পসিটিভ বা ধনাত্মক চার্জ) আর এদের কক্ষপথে থাকে ইলেকট্রন বা নেগেটিভ চার্জ। তবে এ্যন্টিম্যটার এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একদম বিপরীত। এদের নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এ্যন্টি নিউট্রন, এ্যন্টি প্রোটন (নেগেটিভ চার্জ) আর এদের কক্ষপথে থাকে পজিট্রন (ধনাত্মক চার্জ)।
বিজ্ঞানিদের মতে এই এ্যন্টিম্যটার ও সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রচুর রয়েছে, অর্থাৎ জত পরিমান ম্যটার রয়েছে ঠিক তত পরিমান এ্যন্টিম্যটার ও রয়েছে। তবে এই এ্যন্টিম্যটার দিয়ে তৈরি গ্রহ বা উপগ্রহ এতটাই দূরে অবস্থিত যে যে এখনও পর্যন্ত তা জানা যায়নি বা আবিস্কার করা হয়নি। অর্থাৎ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যতগুলি ম্যটার দিয়ে তৈরি গ্রহ আছে ঠিক ততগুলি এ্যন্টিম্যটার দিয়ে তৈরি গ্রহ বা উপগ্রহ রয়েছে। এরা ম্যটার এর মতই আচরন করে, অর্থাৎ কোনোদিন অ্যান্টিম্যটার এর সন্ধান পাওয়া গেলেও বোঝা যাবেনা যে এগুলি অ্যান্টিম্যটার দিয়ে তৈরি। তাহলে সমস্যা কোথায়?
আসলে সমস্যা তখন শুরু হবে যখন এই অ্যান্টিম্যটার দিয়ে তৈরি কিছু ম্যটারের সংস্পর্শে আসবে।
এ্যন্টি ম্যটার বোমঃ- অ্যান্টিম্যটার বোম যদি কোনোদিন তৈরি করা হয় তাহলে তা ধ্বংসাত্মক রুপ নেবে। আসলে এই এ্যন্টি ম্যটার যখন ম্যটারের সংস্পর্শে আসবে তখনই ধ্বংসাত্মক রুপ নেবে। এবং এর ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হবে তা পুরোটাই শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালি পরমানুর যুদ্ধাস্ত্রের ভরের ৭ থেকে ১০ শতাংশ শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। বাকি শক্তি হারিয়ে যায়।
কোনোদিন যদি এ্যন্টি ম্যটার আর ম্যটার সংস্পর্শে আসে তাহলে যে শক্তি তৈরি হবে তা হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আক্রমন করা পরমানু বোমা ফ্যাট বয় এবং লিটল ম্যানের কয়েক গুন হবে। কোন কিছু যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই এই এ্যন্টি ম্যটারের মাত্র ১ গ্রাম ব্যবহার করে দুটো বড় শহরকে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব।
বা ধরুন এই এ্যন্টি ম্যটারের ১০ কোটি ভাগের মাত্র ১ ভাগ যদি একটি ৯এমএম পিস্তলের বুলেটের মাথায় দিয়ে ফায়ার করা হয় তাহলে আমেরিকার গুয়াম মিলিটারি বেস ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে শুধু মিলিটারি ক্ষেত্রেই নয় জ্বালানি হিসবে যদি কোন মহাকাশযানে ব্যবহার করা যায় তাহলে মহাকাশযানের থ্রাস্টার থেকে উৎপন্ন হওয়া বিরাট পরিমান থ্রাস্ট মহাকাশযানকে আলোর গতীর ৫০শতাংশ গতীতে নিয়ে যেতে পারবে।
তবে এটিকে কোনোদিন ব্যবহার করা যাবেনা।
কারন হিসাবে দেখতে গেলে প্রথমেই মাথায় আসে যা তাহল বিরাট পরিমান ব্যয়। এটির ১ গ্রাম তৈরি করতে খরচ হবে $৬৫ ট্রিলিয়ন। বর্তমানে পৃথিবীর জিডিপি $৯৪ ট্রিলিয়ন ও নয়। এটি তৈরি করতে গিয়ে সারা পৃথিবীর ৬৭ শতাংশ জিডিপি শেষ হয়ে যাবে। দামের পাশাপাশি আবার এটি সংরক্ষণের জন্য খরচ। কারন এটি সংরক্ষণ করতে বিরাট পরিমান খরচ করতে হবে। কারন সাধারন জায়গায় রাখা যাবেনা, কারন সাধারন ম্যটার আছে যা সংস্পর্শে আসলে কি হতে পারে তা ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এটি রাখতে গেলেও বিরাট পরিমান খরচ করতে হবে।
তবে শুধু দাম বা সংরক্ষণের খরচ নয় পাশাপাশি এটি তৈরি করতেও প্রচুর সময় লাগবে। European Organization for Nuclear Research যাকে CERN বলা হয়ে থাকে, তাদের লার্জ হায়ড্রন সংঘর্ষ করা হয় যেখানে দুটি প্রোটনকে আলোর ৯৯.৯৯শতাংশ গতীতে ঘুড়িয়ে ধাক্কা খাওয়ানো হয় সেখানে প্রতি মিনিটে এক কোটি পজিট্রন তৈরি করা যায় অর্থাৎ পৃথিবীতে যে টেকনোলোজি আছে তা ব্যবহার করলেও প্রায় ১০,০০০ কোটি বছর সময় লেগে যাবে মাত্র ১ গ্রাম এই অ্যান্টিম্যটার তৈরি করতে।
বলা বাহুল্য যে বিরাট পরিমান হায়ড্রন সংঘর্ষে তৈরি এ্যন্টি ম্যটার পার্টিকেল মাত্র ১৭মিনিটই সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।
তব শুধু কৃত্রিমভাবেই নয় সাধারনভাবেও প্রকৃতিতে এই অ্যান্টিম্যটার তৈরি হয়। যখন মহাকাশ থেকে কসমিক রে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন তার বিক্রিয়ায় এন্টিম্যাটার এর অনেক ছোট ছোট কনা তৈরি হয়। কিন্তু তা কয়েক সেকেন্ডেই ম্যটারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে।
অর্থাৎ বুঝতেও পারছেন যে কতোটা ধ্বংসাত্মক জিনিস এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে।