ভারতবর্ষ কি কোনোদিন ‘আকসাই চীন’ নিজেদের দখলে নিতে পারবে?
ভারতের পক্ষে চীনের কাছ থেকে আকসাই চীন দখল করা মোটেই অসম্ভব কিছু না। তবে এই মুহূর্তে সেটা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ আছে। বর্তমান বিশ্বে চীনের সশস্ত্র বাহিনী সবথেকে বড়। তার উপর চীন অর্থনৈতিকভাবে এখন বিশ্বের সেরা হওয়ার কাতারে নাম লিখিয়েছে। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
ভাবতে অবাক লাগে নব্বইয়ের দশকে ভারত এবং চীনের অর্থনীতি একই জায়গায় ছিল। সেখান থেকে চীন যত দ্রুত গতিতে নিজের অর্থনীতিকে উচ্চতায় নিয়ে গেছে ভারত সেখানে যেতে পারেনি। তার ওপর এক সময় চীন ছিল সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর আমদানি নির্ভর। কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। বরং চীন নিজেই এখন নিজের সামরিক সরঞ্জামাদির সিংহ ভাগ অভাব পূরণের সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে। এখন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান (জে২০) তৈরি করছে।
চীনের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিমান বাহিনীকে এমন উচ্চতায় নিয়ে পৌঁছানো যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি মোকাবেলায় যে কোন সময় জবাব দিতে পারে।
এ তুলনায় ভারতের অবস্থান কিছুটা হতাশ জনক। ভারত পঞ্চম প্রজন্মের বিমান তৈরির প্রকল্প শুধুমাত্র খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর থেকে ভারত এখন চতুর্থ প্রজন্মের বিমান(তেজাস) তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী বরাবরই নিজেদের তৈরি অস্ত্রের চেয়ে বাহিরের অস্ত্রের উপরই বেশি ভরসা রাখে। যদিও বিগত কয়েক বছরে এই দৃশ্যপটের পরিবর্তন এসেছে। ভারত গেলো বছরগুলোতে নিজের সামরিক সরঞ্জামাদি তৈরির প্রকল্প বেশ জোরদার এগিয়ে নিচ্ছে।
একসময় ভারত ছিল অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায়। কিন্তু এখন তা দ্রুতই পরিবর্তিত হচ্ছে। তবুও চীন নিজের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যত দ্রুত নিজের অবস্থা পরিবর্তন করতে পেরেছে ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টা এত দ্রুত নয়। এক্ষেত্রে ভারত-চীনের থেকে পিছিয়ে আছে।
এখনকার দিনের যুদ্ধ শুধু মাত্র দুটি পক্ষের সামরিক বাহিনীর সংঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং এতে ভূ-রাজনীতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারত এবং চীনের ক্ষেত্রে সংঘাত তৈরি হলে চীন অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র গুলোর কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন পাবে। কারণ এই দেশগুলো চীনের ঋণ ফাঁদে থাকার কারনে চীন নিজের সমর্থন আদায় করে নেবে। অপরদিকে ভারত পশ্চিমা দেশগুলো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে। এখানে যুদ্ধে জয় পরাজয়ের নির্ণায়ক ভূমিকায় থাকবে রাশিয়া।
ভারতের পক্ষে চীনের মতো একটি বড় বিশাল বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে তাদের এলাকা পুনরুদ্ধার করা এতটা সহজ হবে না। অন্যদিকে চীনা সৈন্যবাহিনী বিগত ৪০ বছর ধরে কোন বড়ো ধরনের সংঘাতে যায়নি। ১৯৭৯ সালে চীন যখন সর্বশেষ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েছিল তাতে চীনের পরাজয় ঘটেছিল। তবে এই দুটো দেশের উচিত নিজেদের মধ্যে সংঘাত এড়িয়ে চলা। কারণ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ প্রমাণ করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়ার থেকে ছোট হওয়া সত্বেও রাশিয়াকে কতটা নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।সেখানে দুটো আঞ্চলিক পরাশক্তি পরস্পরের মুখোমুখি হলে সংঘাত কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কল্পনার বাইরে।